Monday, February 20, 2012

পলাতক

আবার মনে পড়ে গেল ভদ্রলোক কেন এখনও আমার শিক্ষক...

পলাতক
মৈনাক বিশ্বাস

দায়রা-র কথা লিখে ফেলার পর মাঝে মাঝে অন্য আরও ছবি স্বপ্নে এসে হানা দিচ্ছে। এদের কথাও কেউই বিশেষ বলেনি। পুঁথিপত্রের ক্লাসিক-এর লিস্টে এরা নেই, ভাল লাগা ছবির আলোচনাতেও এদের কথা এখন আর শুনতে পাওয়া যায় না। অথচ প্রথম দেখার পর থেকে আর ভুলতে পারিনি ওইসব নিভৃতে যত্নে গড়ে তোলা কাজ।

পলাতক-এর (১৯৬৩) কথা ভাবলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে বাংলার সজল গ্রাম, আলের পথ, নদী নৌকা, মেলার ছবি। বিরাট এক খোলা দুনিয়ার হাওয়া এসে সিনেমার আর স্মৃতির দুই পর্দা এক করে দেয়। উন্মুক্ত আকাশ মাটির এক দুর্নিবার টান তৈরি হয়ে ওঠে ছবি জুড়ে ধীরে ধীরে, আর তার সঙ্গে থাকে দুয়ের মাঝখানে একটি মানুষের হাওয়ার মত চলাফেরা। লোকটার নাম বসন্ত। সে বার বার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, জমিদার দাদা আর বৌদির সস্নেহ আশ্রয়, জমিদারি বৈভব, কিছুই তাকে বেঁধে রাখতে পারে না। সবাইকে ভাবিয়ে কাঁদিয়ে পালিয়ে যায় লোকটা। যেখানে ইচ্ছে গিয়ে দু’দিন থাকে, গানে গল্পে মজিয়ে দেয় মানুষকে। তারপর যেই না দেখে অচেনা সেই সব মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরছে তখনই চম্পট দেয়। পলাতক ঘর উঠোনের মায়া বুনতে বুনতে এগোয় বলেই চলাচলের টান ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর পাঁচটা ছবির মত চরিত্রের মনস্তত্ত্ব অবলম্বন করে এগোলে, মনের কথাগুলো সংলাপে বলে দিলে, এই জিনিসটা করাই যেত না। সেইসব ছবি বহুদিন পরে স্বপ্নে এসে হানা দেয় যাদের মূল অনুভূতি ছবির বিশ্বে ছড়িয়ে থাকে, চরিত্রের মধ্যে বাঁধা থাকে না।

ভবঘুরে বসন্ত (অনুপকুমার) পৌঁছে গেছিল এক অজ পাড়াগাঁয়ে নীলাম্বর কবিরাজের (জহর রায়) গরিব কুটিরে। সেখানে তখন চুটিয়ে যাত্রার রিহার্সাল হচ্ছে। বসন্ত ঝড়ের মত এসেই কবিগান শুনিয়ে কবিরাজ আর তার স্যাঙাতদের নিয়ে মস্করা শুরু করে দেয়। কিছু বলতে গেলেই তার মুখে এক লব‌্জ, ‘আমি হলাম গিয়ে আংটি চাটুজ্জের ভাই’ (মনোজ বসুর মূল গল্পের নাম ‘আংটি চাটুজ্জের ভাই’)এই বলে সবার উপর তার চোটপাট। কে তার দাদা, কোথায় তার বাসা কেউ জানে না। তার মুখেই ছবির শুরুতে শোনা গেছে, ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই, কোনও দেশে সাকিন নাই’ কিন্তু তার কথায় সায় না দিয়ে উপায় কী।  সবাই যে তারা মুখ্যু, আর সে যে একটা উচ্চবংশের আংটিবাবুর ভাই, এ বিষয়ে তো আর সন্দেহ করা চলে না। সে'ই বলে দেয় কার বাড়িতে কোন বিছানায় শোবে, কেমন রান্না খাবে। কবরেজের মা মরা মেয়ে হরিমতী (সন্ধ্যা রায়) তাকে ভালবেসে ফেলে, কিন্তু সে একদিন গাঁ ছেড়ে পালাবার ধান্দা করে তো আরেকদিন গিয়ে বসে পড়ে মাঝিদের সঙ্গে দাবা খেলায়। মেলায় নাচতে আসা মেয়েদের দলের পিছনে গিয়ে অচ্ছ্যুত আসরে গান গেয়ে মাতিয়ে দিয়ে আসে ছোটলোকের জমায়েত।

এই সব কাণ্ডের মধ্যে একের পর এক আশ্চর্য দৃশ্য ফেঁদেছেন পরিচালকবৃন্দ। (‘যাত্রিক’; সদস্য ছিলেন তরুণ মজুমদার, শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়)। মেলার আসরের সঙ্গে ইন্টারকাট করা এক সমান্তরাল দৃশ্যে দেখি নীলাম্বরের বাড়িতে রাতের রাতের রিহার্সাল। সকলে গাঁজায় টান দিচ্ছে আর ডায়লগ ঝাড়ছে। এদিকে বেহায়া নাচগানের আসরে ঘাঁটি গাড়ায় সবার খুব রাগ বসন্তের উপরে। যতবার রিহার্সালে ফিরে আসি, দেখি গাঁজার টান এক পর্দা করে চড়ে গেছে – সব একে একে কাত, ক্রমে ক্রমে বাড়ছে মত্ত ডায়লগের সুর। আর জহর গাঙ্গুলির মাঝে মাঝে কবিরাজকে জড়ানো গলায় বলছেন, ‘নীলু, শান্তি ভঙ্গ কোরো না, শান্তি ভঙ্গ কোরো না।’

আংটি চাটুজ্জের ভাই, গরিবের অনুরোধ তো ফেলতে পারে না, তাই নেহাত অনিচ্ছায় কবরেজের ‘ধানী লংকা’ মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয় বসন্ত। যদিও তার ঘোর সন্দেহ কেমন জাতের বামুন তার শ্বশুর। কিন্তু বিয়ের আসরে তার দেখা নেই। সে তখন খুঁজে বেড়াচ্ছে তার অজাত কুজাতের বন্ধুদের; নাচনী মেয়েদের দল (অনুভা গুপ্ত, রুমা গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে সেখানে আছেন হরিধন বন্দ্যোপাধ্যায়) গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে, তাদের খুঁজে ফিরছে মনের দুঃখে। শেষ রাতে হরিমতীর কাছে সে ফিরে এসে বলে, ‘ভয় নেই, ফেলে পালাইনি।’

কিন্তু পালিয়ে তো সে যাবেই, অকারণে। এ বহু যুগের পুরনো গল্প, নানা দেশে, নানা সময়ে লোকে গল্পটা নিজেদের বলেছে – কেমন করে বনজঙ্গল, গহন পথ, নদী-সমুদ্দুর ঘর থেকে এক একটা লোককে পাগল করে টেনে নিয়ে যায়, কিছু দিয়েই তাদের বেঁধে রাখা যায় না। বসন্ত বউ নিয়ে দাদার বাড়িতে ফিরে যায়, হরিমতীকে আদর করে আপন করে নেয় দাদা বৌদি। কিন্তু বাগদী পাড়ার গানের আসর ছেড়ে জমিদারি সেরেস্তায় বসার হুকুম তামিল করার লোক তো আংটি চাটুজ্জের ভাই নয়, সে হুকুম আংটি চাটুজ্জে নিজে দিলেই বা কী। বৌ তাকে ভালবাসায় বশ করছে টের পেয়ে একদিন রাতে বসন্ত হরিমতীকে গান শোনাবার ছল করে নদীর ঘাটে নিয়ে যায়। তাকে পাড়ে বসিয়ে রেখে সে নৌকায় চেপে বসে; তারপর দাঁড় টেনে সোজা ভেসে পড়ে গহীন গাঙে। শত খোঁজাখুঁজিতে তার টিকিটিও আর দেখা যায় না।তারপর আবার পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়ানো।

মাঝে মাঝেই অন্য মনুষ্য প্রাণীর ভালবাসায় বাঁধা পড়া সেই চলার সবচেয়ে বড় বিপদ। সে সব তাকে কখনও কাবু করে ফেলে না তা নয়। কিন্তু আরেক রকম বাঁধনও আস্তে আস্তে হাত বাড়ায় তার দিকে, তার কাছে চুপ করে নিজেকে সমর্পণ করা ছাড়া তার উপায় থাকে না; ক্ষয়রোগ বাসা বাঁধে তার অফুরন্ত প্রাণের খাঁচায়। নাচনীর দলের সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যায়, ভিড়ে যায় সেখানে। অকাল অবসানের সুরে সঙ্গত করা ওই ঘরছাড়া তামাশার দল তো তারই দোসর। এদের সঙ্গে তাকে একদিন তার গ্রামে ফিরে যেতে হয়। আমরা জানতে পারি ওরা তারই ছেলের অন্নপ্রাশনের নাচগানের বায়না পেয়েছে। সেখানে অসুস্থ বসন্ত চুপি চুপি বাড়িতে ঢুকে দেখে দোলনায় শুয়ে আছে তার ছেলে। তারপর দেওয়ালে চোখ পড়ে, সেখানে ফুল আর ধূপ দিয়ে সাজানো আছে লক্ষ্মীমন্ত হরিমতীর ছবি। এতদিন হরিমতী কী করছিল জানতে পারিনি, এবার জানা গেল অন্য দুনিয়ায় পাড়ি দিয়েছে সেও। বসন্তের চোখে এবারে জল আসে।

কিন্তু তাই বলে হট্টগোল করে তখন তাকে যারা খুঁজছে তাদের হাতে ধরা পড়বার পাত্র সে নয়। সোজা চলে যায় সেই ঘাটে যেখানে একদিন মাঝরাতে বউ-এর সঙ্গে সে নিদারুণ তামাশা করেছিল। নৌকায় উঠে পড়ে ভেসে চলে যায় মাঝ গাঙে। জ্যোতস্নার আলোয় জলের বুকে ভাসতে ভাসতে মরে যায় আংটি চাটুজ্জের ভাই।

ওই আলো চোখে লেগে থাকে, অনেকিদন পরেও। গানে গল্পে অভিনয়ে জমজমাট পলাতক-এ আলো জমি আকাশ জলের স্পর্শ এক নির্মম অজানা ঠিকানার সন্ধান বলে যায়। দুরন্ত প্রাণের বুকভরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় চরাচর জুড়ে বাজতে থাকা এক ওপারের সুর। মজাটা হল, এখানে আধ্যাত্মিকতার সামান্য কোনও অবতারণা ছাড়াই শোনা যায় জীবনের উল্লাসের পাশে পাশে লোকান্তরের কথা। আর যে কথাটা বলছিলাম, ব্যক্তি চরিত্রের হাত ছাড়িয়ে ছবির বিশ্বে ছড়িয়ে যায় ছবির মূল আবেগ। কত ছবিতে দেখেছি বসন্তকে শেষে ঘরে ফিরে আসতে; পলাতক সাহস করে বলে, ছবির পটে যে দিগন্ত ধরা পড়ে সেটাই আত্মা নামক অচিন পাখির ঠিকানা।

মূল লেখাটি পড়ার জন্যে ঃ পলাতক | Anandabazar

Friday, February 17, 2012

KOLKATA R GAAN BY AMIT KUMAR

KOLKATA R GAAN BY AMIT KUMAR: TWO RARE BENGALI SONGS OF AMIT KUMAR FROM HIS BENGALI POP ALBUM KOLKATAR GAAN . THIS ALBUM WAS RELEASED IN THE YEAR 1990.

Thanks to the uploader. I have been searching for this for too long now. Any one who can upload the rest of the songs will be highly appreciated.