Thursday, August 30, 2012

কাউকে না লেখা চিঠি




এম.. ক্লাসে শিখেছিলাম, চিঠি সবসময় গন্তব্যে পৌঁছয়। চিঠি লেখার যেমন কেউ একটা থাকে, চিঠি পাবারও কেউ একটা থাকে। মোদ্দা কথা, চিঠির একটা উদ্দেশ্য থাকে। যার কোন উদ্দেশ্য নেই, সে চিঠি নয়। আজকাল কেউ চিঠি লেখেনা। E-mail করে। কে জানে কেন, e-mail-এ কিছুতেই সেই ব্যাপারটা থাকে না। হয়ত কুসংস্কার।

আমাকে কেউ চিঠি লেখেনা, আমিও কাউকে লিখি না। লেখার প্রয়োজনও নেই খুব একটা। E-mail আছে, sms আছে, chat আছে, whatsapp আছে... আরো কত কত উপায় যে আছে কাউকে কিছু একটা বলার, তার কোন ইয়ত্তা নেই। এই যে এখন যেটা লিখছি, সেটা তাই চিঠি কি না জানি না। কেন লিখছি তাও জানি না। কী যে লিখছি সেটা অবশ্য কোনদিনই জানতাম না, জানার প্রয়োজন বোধ করিনি। যাদের পাঠাতাম, তারাও জানতে চায়নি। উত্তরও দিয়েছে দিব্বি। দু’একজন ছাড়া। হয় বেশীরভাগ লোক পাগল, নয় আমাকে পাগল বলে মেনে নিয়েছে। অথবা যারা উত্তর দেয়নি তাদের অতো সময় নেই। আমার অফুরন্ত সময়। তার মানে এই নয় যে আমার কোনও কাজ নেই। ঢের আছে, অসংখ্য আছে। আমি সেগুলো করিনা। করতে ভালোলাগে না। ইচ্ছে করেনা। যা করতে ইচ্ছে করে, তাই করি। এই যেমন এখন চিঠি লিখছি। আমার taskbar-এ এই মুহুর্তে একটা film, একটা খেলা, একটা website, একটা chat খোলা রয়েছে। যার মানে আমি এই সবকটাই করছি। অথবা কোনটাই করছি না। কারণ ঠিক এই মুহুর্তে আমি লিখছি।এই রকম লেখাকে বোধহয় free-writing বলে। কারণ আমি কিছুই লেখার চেষ্টা করছি না। যা হাতে আসছে, তাই বেরোচ্ছে। এই লেখা কাউকে পড়াবার দায় নেই, সময়ে শেষ করার তাড়া নেই, সত্যি বলতে কি এ লেখার কোন শুরু বা শেষ কিছুই নেই। থাকতেও পারে, আমি ঠিক জানি না। কাল থেকে একটু জ্বর হয়েছে। তাই নানা কথা মাথায় আসছে। বেকার কথা। কিছু স্মৃতি আছে তার ভিতর, কিছু মুখ, কিছু গান, হয়তো খানিক ভবিষ্যতের ভাবনাও আছে। এই ব্যাপারটা নতুন। হয়ত বয়েস বাড়ছে বলে। কিম্বা অন্য কিছুও হতে পারে। চারপাশে অনেক কিছুই তো পাল্টে গেলো, মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় মাঝে মাঝে। অনেক চুপচাপ হয়ে গেছি। নিজে টের পাই। আগে সব ব্যাপারে এগিয়ে গিয়ে মতামত দিতাম, উত্তেজিত হতাম। সেসব আর হয় না। কিছুদিন আগে এক পুরোনো ছাত্রীর সাথে দেখা হয়েছিল। সে বলল, “অনেক শান্ত হয়ে গেছো।” কথাটার মানে বুঝতে পারিনি। কদিন মনে মনে কথাটা নিয়ে নাড়াচাড়াও করলাম। কিছু একটা লিখবও ভেবেছিলাম। এই এখন কথায় কথায় মনে এল। কিন্তু এরকম লিখতে চাইনি। যাক্‌গে, যেতে দিয়েছি। যেমন দিয়ে থাকি আজকাল অনেক কিছুকেই।



অতীতের দিকে তাকালে মনে হয় ভুলগুলো ভাল ছিল, ঠিকগুলো ভুল। আফশোষ করব না ঠিক করেছিলাম, ভুল করেছিলাম। সেই হাঁটু মুড়ে বসতেই হয় একদিন না একদিন। অবশ্য মাথা তুলে কোনদিনই বাঁচিনি তেমন করে। ছাপোষা মধ্যবিত্তর ওসব বিলাস পোষায় না, স্বপ্ন দেখা অবধিই দৌড়। অতীতের দিকে বেশী তাকালে দুঃখই হয়। তাই চেষ্টা করি ভুলে যেতে। খুব সহজ নয়। কিন্তু ভুলে যাই। Pen-drive হারিয়ে ফেলি, লেখা জমা দিতে দেরি হয়ে যায়, কত কাজ করা হয়ে ওঠে না, স্রেফ ভুলে যাই বলেই। ইতিহাসে কোনও কালে ভাল ছিলাম না। পেটের দায়ে সেই ইতিহাস নিয়েই থাকি। আমি যে কী, আমি নিজে কোনদিনই বুঝতে পারিনি। কী হতে পারবো না কখনো, সেইটা আজকাল তবু ঝাপসা মতন দেখতে পাই। একদিক থেকে ভালোই। এককালে অসীমে বিশ্বাস করতাম, এখন সীমানা হলেই স্বস্তি হয়। গোটাটা স্বীকারোক্তির মত শোনাচ্ছে হয়ত, কিন্তু তাতেই বা কী? লিখছি তো এমনিই, যা খুশি তাই। কাউকে কোন জবাবদিহি করার তো কোন দায় নেই। স্রেফ হাতে আসছে তাই লিখছি।

শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল এটা ঠিক চিঠি হবে না। হচ্ছেওনা। অথবা হচ্ছে। দরখাস্ত হচ্ছে না। আমি তো এরকমই চিঠি লিখি। এলোমেলো, উদ্দেশ্যহীন। যারা পায়, তারা মানে বুঝে নেয়। এটা কেউ পাবে না, তাই মানে বোঝার দায় নেই। থাকলেও সে দায় আমার না। আসলে আমার জ্বর হয়েছে। তাই হয়ত ভুল বকছি। আসলে আমার মাথায় ছিট আছে। কিছু একটা হচ্ছে, বা হচ্ছে না। বাজে বকা অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই বাজে না বকে থাকতে পারিনা। এখন বাজে বকার কেউ নেই, তাই নিজের সঙ্গে বকছি। আমি তো আসলে অতীত আর ভবিষ্যতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বিন্দু, প্রতি মুহুর্তে মরে যাচ্ছি, আবার জন্মাচ্ছিও। আমার তো আসলে ঠিক এইখানে শেষ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু পারছি কই?

No comments:

Post a Comment